পোস্ট প্রেগন্যান্সি ডিপ্রেশন কী, কেন হয় | ডা আবিদা সুলতানা
গর্ভধারণ এবং মাতৃত্ব, একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তবে এই আনন্দময় অভিজ্ঞতার পাশাপাশি অনেক নারী মানসিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। যার মধ্যে একটি হলো পোস্ট প্রেগন্যান্সি ডিপ্রেশন বা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন।
অনেক সময় সন্তান জন্মের পর মায়েরা হালকা মানসিক অস্বস্তি বা মুড সুইংয়ের সম্মুখীন হন। যাকে সাধারণ ভাষায় "বেবি ব্লুজ" বলা হয়। কিন্তু যখন এই অস্বস্তি তীব্র হয় এবং দীর্ঘসময় থাকে, তখন সেটিই পরিণত হয় পোস্ট প্রেগন্যান্সি ডিপ্রেশনে। এটি শুধু মায়ের জীবনকেই প্রভাবিত করে না, বরং নবজাতকের যত্ন এবং পুরো পরিবারের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
পোস্ট প্রেগন্যান্সি ডিপ্রেশন কী ?
পোস্ট প্রেগন্যান্সি ডিপ্রেশন হলো সন্তান জন্মের পরে মায়ের মধ্যে দেখা দেওয়া একটি গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি সাধারণত সন্তানের জন্মের পর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হয়, তবে কখনো কখনো ছয় মাসের মধ্যেও প্রকাশ পেতে পারে।
এর ফলে মায়ের মধ্যে দেখা দিতে পারে অতিরিক্ত দুঃখ বা হতাশা, সন্তান লালন-পালনে আগ্রহের অভাব, অতিরিক্ত ক্লান্তি, ভয় বা উদ্বেগ, আত্মবিশ্বাসের অভাব, শিশুর প্রতি অনাগ্রহ বা অতিরিক্ত ভয়ের অনুভূতি। পোস্ট প্রেগন্যান্সি ডিপ্রেশন চিকিৎসা ছাড়া দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং মায়ের পাশাপাশি শিশুর বিকাশেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
পোস্ট প্রেগন্যান্সি ডিপ্রেশন কেন হয় ?
পোস্ট প্রেগন্যান্সি ডিপ্রেশন সুনির্দিষ্ট একটি কারণ নির্ধারণ করা কঠিন। বিশেষজ্ঞরা এর পেছনে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন_
হরমোনের পরিবর্তন
প্রেগন্যান্সির সময় মায়ের শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। শিশুর জন্মের পর এই হরমোনগুলোর মাত্রা দ্রুত কমে যায়। এই হরমোনেয় পরিবর্তন মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, ফলে ডিপ্রেশন তৈরি হয়।
শারীরিক পরিবর্তন ও ক্লান্তি
গর্ভধারণ এবং প্রসবের ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। সন্তান জন্মের পর নিয়মিত ঘুমের অভাব, বুকের দুধ খাওয়ানো, ব্যথা ও ক্লান্তি একত্রে মানসিক চাপ বাড়ায়।
মানসিক চাপ ও নতুন ভূমিকার চ্যালেঞ্জ
মাতৃত্ব একটি বিশাল পরিবর্তন। সন্তানের যত্নের দায়িত্ব, নিজের স্বাধীনতা হারানোর অনুভূতি, ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ ইত্যাদি মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
পারিবারিক বা সামাজিক চাপ
অনেক সময় পরিবারের অতিরিক্ত প্রত্যাশা বা সমর্থনের অভাব থেকেও ডিপ্রেশন তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে যারা একা বা দূরে বসবাস করেন, তাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
অতীতের মানসিক রোগের ইতিহাস
যদি কোনো নারীর অতীতে ডিপ্রেশন, অ্যানজাইটি বা অন্য মানসিক সমস্যার ইতিহাস থাকে, তাহলে তার পোস্ট প্রেগন্যান্সি ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বেশি হয়।
পোস্ট প্রেগন্যান্সি ডিপ্রেশনের লক্ষণ
পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলো নানা ধরনের হতে পারে। সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে_ অতিরিক্ত কান্না বা দুঃখের অনুভূতি, নিজের প্রতি অতিরিক্ত নেতিবাচক মনোভাব, শিশু সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তা বা আতঙ্ক, খাওয়া-ঘুমের সমস্যা, অতিরিক্ত রাগ বা বিরক্তি, একাকীত্বের অনুভূতি, আত্মহত্যার চিন্তা। যদি এই লক্ষণগুলো দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকে এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মনে রাখবেন, পোস্ট প্রেগন্যান্সি ডিপ্রেশন কোনো দুর্বলতা নয়, এটি একটি স্বাভাবিক ও চিকিৎসাযোগ্য অবস্থা। সময়মতো সচেতনতা, সঠিক সহায়তা ও ভালোবাসার পরিবেশ তৈরি করে একজন মা এই কঠিন সময় অতিক্রম করতে পারে।
ডা আবিদা সুলতানা, Dr Abida Sultana, health, fitness, healthy life, সফলতার সূত্র, আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য, asun sustho thaki, mental health
- ডা. আবিদা সুলতানা, (এমবিবিএস)
জেনারেল প্রাকটিসার, সিটি হেলথ সার্ভিসেস লিঃ এন্ড সিটি হাসপাতাল লিঃ
মেডিসিন, চর্মরোগ, বাত-ব্যাথা, শিশু ও গাইনী রোগ বিশেষজ্ঞ।
লেকচারার, জেড এইচ সিকদার মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল, ঢাকা।
Follow Me -
Facebook : Dr. Abida Sultana
Youtube : Dr. Abida Sultana
tiktik : Dr. Abida Sultana
No comments